
নিষেধাজ্ঞা মানছে না জেলেরা ঢিলেঢালা নজরদারি
- আপলোড সময় : ২৯-০৫-২০২৫ ০৫:৩৯:৩৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-০৫-২০২৫ ০৫:৩৯:৩৫ অপরাহ্ন


বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও তা কার্যত উপেক্ষিত হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাব এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তায় বরগুনার আমতলী হয়ে প্রতিনিয়ত ঢাকায় যাচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন এই এলাকায় রাতের আঁধারে মাছ পরিবহনের রুট হিসেবে গড়ে উঠেছে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের আমতলী চৌরাস্তা পয়েন্ট, যা এখন কার্যত নিরাপদ করিডর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সরকার গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ শিকার, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও তা বাস্তবায়নে রয়েছে প্রশাসনিক শৈথিল্য। অভিযোগ রয়েছে, উপকূলীয় এলাকা মহিপুর, আলীপুর, কুয়াকাটা ও তালতলীর কিছু অসাধু মাছ ব্যবসায়ী প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে জেলেদের সাগরে পাঠিয়ে মাছ শিকার করাচ্ছেন। পরে সেই মাছ তুলে দেওয়া হচ্ছে ইসলাম, মিজান, আলিফ, অন্তরা, ইটালী, হাসান ও যমুনা পরিবহনের বিভিন্ন গাড়িতে।
পটুয়াখালী-কুয়াকাটা ও তালতলী সড়কের সংযোগস্থল আমতলী চৌরাস্তা দিয়ে প্রতিদিন এসব পরিবহন ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এই রুট ছাড়া বিকল্প কোন পথ না থাকায় আমতলী পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হলে পুরো পরিবহন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব-এমনটাই মনে করেন স্থানীয় পরিবহন চালক নজরুল ইসলাম।
বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাছ পরিবহনকারী ট্রাক ও বাসগুলো অনায়াসে আমতলী অতিক্রম করে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব গাড়ি নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। যদিও ট্রাফিক বিভাগ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সচেতন নাগরিক রুবেল মিয়া জানান, মাঝে মধ্যে দুই-একটি গাড়ি আটক হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তিনি বলেন, “যতক্ষণ পরিবহন বন্ধ না হবে, সাগরে মাছ শিকারও বন্ধ হবে না।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর ৩৮ দিন পেরিয়ে গেলেও আমতলী উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ মাত্র তিন দিনে তিনটি পরিবহন থেকে ৪১ মণ মাছ জব্দ করেছে। অন্যদিকে তালতলীর ফকিরহাট এলাকায় কোস্টগার্ডের সামনে দিয়েই মাছ পরিবহনের গাড়িতে তোলা হলেও তাদের তৎপরতা নেই। এ বিষয়ে তালতলী নিদ্রাসকিনা কোস্টগার্ড স্টেশনের ইনচার্জ সুজাউদ্দিন মাহমুদ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, “তথ্য পেলে আমরা অভিযান চালাই। ফকিরহাটে যে মাছ উঠছে তা সাগরের নয়, নদীর মাছ।” যদিও বাস্তবে সাগরের মাছ পরিবহন তার চোখের সামনে দিয়েই চলে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ জানান, গত মাসের আইনশৃঙ্খলা সভায় তিনি আমতলী চৌরাস্তা পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোর অনুরোধ করলেও পুলিশ রাজি হয়নি। তাঁর দপ্তরের জনবল সংকটের কথাও জানান তিনি।
আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, “মৎস্য বিভাগ যদি চেকপোস্ট বসায়, তাহলে পুলিশ সহযোগিতা করবে। কিন্তু তারা তো বসায় না। তাহলে আমি পুলিশ কোথায় পাঠাবো?’’
এ প্রসঙ্গে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান বলেন, “মাছ পরিবহন বন্ধে খুব শিগগিরই চেকপোস্ট বসানো হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অভিযান চালিয়ে সামুদ্রিক মাছ জব্দ করা হয়েছে। চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।”
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, ব্যবসায়ীদের নির্দেশেই তাঁরা সাগরে যান। তাদের অভিযোগ, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ মাছ শিকারের সময় দেখেও কিছু বলেন না।
সচেতন মহলের মত, প্রশাসন, ট্রাফিক বিভাগ, কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগ সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন না করলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। শুধু চেকপোস্ট বসিয়ে নয়, প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট ও বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমেই এই বেআইনি মাছ শিকার ও পরিবহন বন্ধ করা সম্ভব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ